শনিবার ১০ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ সকাল ৯:৪৭

শ্রদ্ধেয় শেখ কামাল ভাই আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু : ( পর্ব ২)

সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১            

এডভোকেট নাজমা কাওসার:

লালমাটিয়া গার্লস স্কুল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হবার পর আমি আর পারভীন তো মহানেতা বনে গেলাম। শেখ কামাল ভাই ও অন্যদের স্নেহ সেই ক্লাস এইটে নাইনে পড়া আমাদের মাঝে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস উৎসাহ ও দেশপ্রেম সৃষ্টি করলো।

আমরা প্রায়শই ছুটির দিনে ছাত্রলীগ অফিসে বিভিন্ন মিটিং এ যাতায়ত শুরু করলাম। ছাত্রলীগ অফিসে তখন ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের উল্টা পাশে ৩০ নম্বর মিরপুর রোড। যা বর্তমানে জনতা ব্যাংক। নিচ তলায় ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের ও দোতলায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ অফিস।
শেখ শহীদুল ইসলাম ভাই তখন ছাত্রলীগের সভাপতি। ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগে সৈয়দ নুরু ভাই ও মমতাজ ভাই দায়িত্বে। ওবায়দুল কাদের ভাই কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন।

যাক সবার আদর স্নেহ আমাদের মাঝে প্রত্যয় ও দৃঢ়তা, সাহস আরো বাড়িয়ে দিল। নিজেদের অনেক বড় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক মনে করতাম। ওই বয়সে স্বাভাবিক ভাবেই যা হয়। এখন বুঝি ঢাকা শহরে একমাত্র স্কুল থেকে আমরা দুজনই যেতাম বলেই হয়তো সবাই অনেক বেশি স্নেহ করতেন।

শেখ কামাল ভাই তখন দেশ পুনর্গঠনে ও ছাত্রলীগ কে সংগঠিত করা, উনার আবাহনী ক্রিয়াচক্র কে এগিয়ে নেয়া , বিভিন্ন সামাজিক কাজ কর্মে সহ ছায়ানট এর সাংস্কৃতিক চর্চা ইত্যাদি নিয়ে মহা ব্যস্ত। আবাহনী ক্রিয়াচক্র প্রতিষ্ঠা করে তিনি আধুনিক ফুটবল খেলায় নব জাগরণ তৈরি করেছিলেন। প্রিয় আবাহনী যখন খেলায় জিততো কামাল ভাই দেখতাম ছাত্রীলীগ অফিসে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতেন। বঙ্গবন্ধুর খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক মনে পুত্র এই বীর মুক্তিযোদ্ধার চোখে মুখে থাকতো বিজয়ের কি প্রাণবন্ত উচ্ছাস কি নির্মল উল্লাস।

তবে সকল ব্যস্ততার কেন্দ্রবিন্দু দেশ পুনর্গঠন ও সংগঠন কে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা। আনুষ্ঠানিক কোনো নেতৃত্বে না থেকেও তিনি পরম স্নেহ আদরে আগলে রাখতেন প্রতিটি নেতা কর্মীকে। খুঁজে রাখতেন জানতে চাইতেন সবার সমস্যা ও অসুবিধার কথা। বাবার সুযোগ্য পুত্রের মতোই প্রকৃত নেতার অসাধারণ সব গুণাবলী ছিলো উনার চরিত্রে। অত্যন্ত মেধাবী ও অনন্য সংগঠক, তুখোড় বক্তাও ছিলেন তিনি। উনার আচার আচরণ ছিলোনা খুব সাধারণ, বঙ্গবন্ধুর পুত্র বলে কোনো উদ্যত্ব দাম্ভিকতা কখনো দেখিনি উনার মাঝে। অত্যন্ত মিস্টিভাষী ও মিশুক প্রকৃতির একজন নিরঅহংকার সাহসী তরুণ।

অনেক স্মৃতির মাঝে একটা অসাধারণ স্মৃতি উনাকে নিয়ে না বললেই নয়। ১৯৭৩ এর ডিসেম্বর মাসে সম্ভবত ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলন ছিলো রমনা গ্রিনে। বঙ্গবন্ধু প্রধান অতিথি। সারাদিনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষে সন্ধ্যায় ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউট এ সম্মেলনের মূল পর্বে। অর্থাৎ কমিটি গঠনের পালা। বিভিন্ন স্কুল কলেজ এর সভাপতি সাধারণ সম্পাদকরা কাউন্সিলর। তাদের নিয়েই সাবজেক্ট কমিটি।

ছাত্রলীগের ঐতিহ্য অনুসারে প্রথমে আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি করার চেষ্টা করা হলো। তা না হলে কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচন দেয়ার বিধান। আর সে কারণেই বিভিন্ন স্কুল কলেজের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কে থাকতেই হলো। রাত প্রায় নয়টা সাড়ে নয়টা বেজে গেলো। বাসায় পৌঁছানো ও বকা খাওয়ার ভয়ে আমরা আতঙ্কিত। এখনকার মত ছিলোনা কোনো টেলিফোন সুবিধা তাই বাসায় সবাই চিন্তিত থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কাউন্সিল কোনো ঐকমত্যের সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারছেনা। রাত গভীর হচ্ছে।

১৯৭৩ সালের ওই সময়টায় জাসদের গণবাহিনী ও সিরাজ শিকদারের সর্বহারা পার্টির ত্রাস চতুর্দিকে। শহরময় আতংক। ছিনতাই হচ্ছে, হাইজ্যেক হয়ে যাচ্ছে মেয়েরা। সন্ধ্যার পরেই প্রায় রাস্তা ঘাট জনশূন্য হয়ে যায়। সমস্ত দোষ ছাপানো হচ্ছে ছাত্রলীগের ঘাড়ে। শেখ কামাল নামে নানা কুৎসা রটনায় সিদ্ধহস্ত জাসদের মুখপত্র “গনকণ্ঠ”। এহেন কুৎসিত কথা ও জঘন্য মিথ্যাচার নেই যা করা হয়নি শেখ কামাল ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে। তার উপর ছিল মাওলানা ভাসানী ” হক কথা” পত্রিকা !

জাসদ কায়েম করতে চাচ্ছে হাস্যকর বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ☺️ 😊!
সিরাজ শিকদারের সর্বহারা পার্টি শ্রেণী শত্রু খতমের নামে করছে খুন খারাপি 😥😪 ! বাংলাদেশ নিয়ে তিনারা খুশি নয় কায়েম করবেন স্বাধীন পূর্ব বাংলা 😡 !!
তার উপরে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র তাদের পাকিস্তানি ও মার্কিনী প্রভুরা তো আছেই ষড়যন্ত্রে সক্রিয়।

এমন একটি ভয়ানক পরিস্থিতি তে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে সদ্য স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু সরকার বেশ বেকায়দায়। খুন হোচ্ছেন একের পর এক জনপ্রতিনিধি এম পি। ডুবে যাচ্ছে বা ডুবিয়ে দেয়া হচ্ছে খাদ্যের লবণের জাহাজ। আগুন লাগাচ্ছে পাটের গুদামে গম চালের গুদামেও আগুন !
যাক সেদিনের কথাই বলি। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো কয়েকজন যাবেন বঙ্গবন্ধুর কাছে এবং তিনি যাদের নেতা বানাবেন সবাই তা মেনে নেবেন।
এখন সমস্যা হলো এমন একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি তে আমরা মেয়েরা যার যার বাসায় কিংবা হোস্টেলে ফিরবো কি করে। তখন রাত নয়টা দশটা মানেই অনেক রাত। অনাদের তো কান্না কাটির দশা। কি হবে এখন।

নেতৃবৃন্দ অভয় দিয়ে বললেন উনারাই পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু উপস্থিত কেউ ই সাহস পাচ্ছিলেন না এতগুলো মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় বের হতে। জাসদ কিংবা সর্বহারা পার্টি একটা অঘটন ঘটাতে পারে। পাঠক একটি বার ভাবুন অনুমান করতে চেষ্টা করুন, ৭৩-৭৪ সালের সদ্য স্বাধীন বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত দেশটিতে এরা কি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। দেশ পুনর্গঠনে অংশ গ্রহন দূরের কথা উপরন্তু সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে দেশের মানুষ কে কষ্ট দিয়ে,পদে পদে বঙ্গবন্ধু কে বদনাম করতে। আজ এরাই সভার অনেকেই দেশপ্রেমিক সেজে বড় কথা বলছেন !

অবশেষে সবাই বললো শেখ কামাল ভাইকে খোঁজ। উনি কোথায় আছেন দেখে উনাকে বিষয়টি জানানো দরকার। একমাত্র বঙ্গবন্ধু পুত্রের পক্ষেই এটা সম্ভব। লোক পাঠানো হল কামাল ভাইকে আনতে।

চলবে ……….

এডভোকেট নাজমা কাওসার।

© Alright Reserved 2021, Hridoye Shariatpur