আপনারা জানেন যে কর্ণেল শওকত আলী ফাউন্ডেশন স্বপ্নের কথা বলে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক, বাঙালি জাতীয়তাবাদের সোনার বাংলার স্বপ্ন। একই সাথে, কর্ণেল শওকত আলী ফাউন্ডেশন মুক্তির কথা বলে। সকল সামাজিক, অর্থনৈতিক, এবং রাজনৈতিক কারাগার থেকে মানুষকে মুক্ত করার প্রত্যাশায় কর্ণেল শওকত আলী যে সংগ্রাম আজীবন করে গেছেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে। কর্ণেল শওকত আলী ফাউন্ডেশন জাতীয় বীর কর্ণেল (অব) শওকত আলীর থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলো কাজের মাধ্যমে প্রতিফলিত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে অবদান রাখতে চায়। আজ সেই মহান জাতির মহান নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে চাই। সাথে ১৫ই আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডের সকল শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে চাই।
বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট করে বলেছিলেন, পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত – শোষক এবং শোষিত। আমি শোষিতর পক্ষে। তবে সেই শোষকশ্রেণীই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল। কর্ণেল শওকত আলী বারবার স্পষ্ট করেই বলে গেছেন, অগণতান্ত্রিক, সম্প্রদায়িক, পুঁজিবাদী, দেশি-বিদেশী স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। এই নির্মম শোষক গোষ্ঠী, যারা ৯ বছরের শিশু রাসেলকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করতে বিন্দুপরিমাণ দ্বিধাবোধ করেনি, এই দলের প্রধান পৃষ্ঠোপোষক, এই নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন নরপিশাচ খুনি জিয়াউর রহমান।
এই খুনি জিয়ার নেতৃত্বে শুরু হয় ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়। এই অন্ধকারেই তারা বাস করতে ভালোবাসে। তারা বিভক্তি পছন্দ করে। বিভক্তির মাধ্যমেই তারা সাধারণ জনগণকে দাবায়ে রাখতে চায়। যেকোনো বিভক্তি, সেটা হোক সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কিংবা ধার্মিক – তারা ক্ষমতা আগলে রাখার প্রয়োজনে সবগুলো বিভক্তি কে বিচ্যুতিতে পরিণত করবে, ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের দূরত্ব সৃষ্টি করবে, তীব্র অশান্তি সৃষ্টি করবে, আর সেই অশান্তির মাঝেই তারা নিজেদের স্বার্থে সকল সুবিধা নিবে।
এই বিভক্তিপ্রেমী, অন্ধকারপ্রেমী গোষ্ঠী যখন ক্ষমতার শিখরে, তখন শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন। খুবই স্বাভাবিক, পরিবারের সবাইকে এরকম একটি ঘটনায় হারানোর পর একজন বেক্তির ভেতরে ভয় কাজ করবে, আত্মরক্ষার প্রচেষ্টা কাজ করবে। বাঙালির ইতিহাসের কলঙ্কময় অধ্যায়, এক তিমির প্রলয়ের মধ্যে আলোর দিশারী হিসেবে সাহস দেশে ফেরত আসেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। পিতা, মাতা, ভাই, ভাবী, আত্মীয় স্বজনদেরকে হারিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। ফেরত আসেন তিনি নেতৃত্বের অভাবে গন্তব্যহীন, আঁধারের মাঝে পথভ্রান্ত, পিতাহারা, আশাহীন বাঙালি জাতির কাছে।
এমনকি, সেসময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বিভক্ত ছিল। তখনকার সময়ে, যখন দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা নিষিদ্ধ, তখন বঙ্গবন্ধুর নাম নেয়া যেত না, এমনকি মুক্তিযুদ্ধের মহান স্লোগান “জয় বাংলা” ও বলা যেত না। যখন পুঁজিবাদী শক্তি মেহনতি মানুষের রক্ত শোষণ করে আকাশচুম্বী উচ্চতায় পৌঁছে ছিলো ঠিক এই রকম এক অন্ধকার সময়ে, শেখ হাসিনা ফেরত আসেন তার মাতৃভূমিতে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরতে।
আসার সাথে সাথেই শুরু হয় উনার সংগ্রাম, শুরু হয় উনার আন্দোলন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে “স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক” সেøাগানে কেঁপে ওঠে রাজপথ। জননেত্রী শেখ হাসিনা এই দেশের আকাশে বাতাসে, বাংলার প্রতিটি ইউনিয়নের, প্রতিটি গ্রামের, প্রতিটি ঘরের, প্রতিটি মানুষের কাছে আওয়ামী লীগের কথা ছড়িয়ে দিয়েছেন। কখনো হেঁটে, কখনো লঞ্চে, কখনো বাস, কখনো ট্রেন, আবার কখনো বা ট্রলারে করে গ্রামে গ্রামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নতুন গণজোয়ার সৃষ্টি করেছেন।
বিভেদ থেকে বিভক্তি নয়, বিভক্তি থেকে বিদ্বেষ নয়,
শোক থেকে শক্তি, শোক থেকে জাগরণে পরিণত করেছেন আমাদের নেত্রী, শেখ হাসিনা।
সর্বস্ব হারানো কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা, এভাবেই তৃণমূল থেকে মৃত্যুঞ্জয়ী আওয়ামী লীগকে পুনর্জীবিত করেছেন। মানুষকে ভালোবেসে, মানুষের আশায়-আকাঙ্খায়, কষ্ট-বেদনায়, সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থেকে মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেছে। বিদেশ থেকে বিভিন্ন মহলের স্বার্থ রক্ষা করে এই ভালোবাসা পাওয়া করা যায় না, নামি-দামি থ্রি-পিস্ স্যুট পরে কাস্তে হাতে ছবি তুলে এই ভালোবাসা অর্জন করা যায় না। শুধুমাত্র মানুষকে ভালোবাসলে, মানুষ আপনাকে ভালোবাসবে।
এবং এই ভালোবাসার জোয়ারে ৪টি বার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। তার ফলে, ঠিক যেমনি বঙ্গবন্ধুকে দেখে আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আমি হিমালয় দেখিনি, আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি, একই ধারায়, আজ আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, আমরা আপনাকে অনুসরণ করি, আমরা চাই আমাদের মেয়েরা আপনার মতো হউক।
এই ব্যাপারটি একটুও অস্বাভাবিক না। কারণ শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য শুধু প্রধানমন্ত্রী নয়। একজন মা যেরকম বাচ্চাদেরকে আগলে রাখে, আমাদেরকে তিনি সে ভাবেই আগলে রেখেছেন। উনার সীমাহীন মায়ার উদাহরণের শেষ নাই – এমনকি, কারাগারে বন্দি অবস্থায় শেখ হাসিনা নিজ হাতে রান্না করে উনার বাবার হত্যাকারীর স্ত্রীকে খাবার পাঠিয়েছেন। ২৫ বছরের স্বৈরাচারের পর যখন প্রথমবারের মতন প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা, তিনি চট্টগ্রামের তীব্র অশান্তিকে শান্ত করেছেন; তিনি সাহস করে যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে খালি হাতে প্রবেশ করে ফিরেছিলেন শান্তি চুক্তি নিয়ে। যখন, পাশের দেশের গণহত্যাকে পুরো পৃথিবী উপেক্ষা করে গেছেন, তিনি নির্যাতিত, নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকে খোলা হাতে গ্রহণ করলেন, আশ্রয় দিলেন।
আজ, শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে, কর্নেল শওকত আলী ফাউন্ডেশন আমাদের নেত্রী, শেখ হাসিনা কে হাজারো সালাম জানাতে চাই। সাথে, আমরা শ্রদ্ধা জানাতে চাই, শেখ হাসিনা দেশে ফেরত আসার আগত পর্যন্ত যারা অতুলনীয় নির্যাতন-নিপীড়ণের মুখেও বলেছে আওয়ামী লীগের কথা, গর্বের সাথে বলেছে জয় বাংলা। আরো শ্রদ্ধা জানাতে চাই শেখ হাসিনা ফেরত আসার পর প্রতিটি পদে পদে, প্রতিটি বাধা-প্রতিবন্ধকতায়, প্রতিটি মুহূর্তে যারা শেখ হাসিনার পাশে ছিল, তাদেরকে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল (অব:) শওকত আলী যখন আমাদেরকে ছেড়ে চলে যান, শেখ হাসিনা বলেন, দেশ এক প্রবীণ জননেতাকে হারাল, আমি হারালাম বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন বিশ্বস্ত সহকর্মীকে। আমরা, কর্নেল শওকত আলী ফাউন্ডেশন শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করতে চাই, হয়তো একজন বিশ্বস্ত সহকর্মী আমাদের মাঝে আর নেই, তবে কর্নেল শওকত আলীর শিক্ষাগুলোর মাধ্যমে, উনার হাজারো অনুসারীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে – পালন করে – আমরা শেখ হাসিনার পাশেই আছি। ইহাই আমাদের প্রতিশ্রুতি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
বাংলাদেশ চিরজীবী হউক।
(মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ৭১ ফাউন্ডেশন আয়োজিত আলোচনা সভায় কর্ণেল শওকত আলী ফাউন্ডেশনের যুগ্ম আহ্বায়ক থেকে প্রাপ্ত বক্তব্য)