মোহাম্মদ জামাল মল্লিক, শরীয়তপুরঃ
একদিকে স্বামীর সংসারের ঘানি অন্যদিকে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছেন নারী উদ্যোক্তারা (গৃহিণী)। স্বামী-সংসারের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে হাঁস পালন শুরু করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন তারা। তাদের এ প্রচেষ্টা দেখে বাড়তি আয়ের আশায় এলাকার অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন হাঁস পালনে।
নড়িয়া উন্নয়ন সমিতি নুসা’র সদস্য হয়ে অনুদান হিসেবে বিদেশি জাতের পেকিন হাঁস পেয়ে খামার করে দারিদ্রতাকে জয় করেছেন শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার নশাসন গ্রামের বর্ষা আক্তার, টিটু আকন্দ, শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের সুজন দোয়াল গ্রামের আয়েশা আক্তার, শিল্পীসহ জেলার ২০ জন নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তা।। একজন বড় খামারি হবার স্বপ্ন দেখছেন তারা। নড়িয়া উন্নয়ন সমিতি নুসা’র অনুদান হিসেবে পেকিন জাতের সাদা রঙের ৫০টা করে হাঁস দেওয়া হয় তাদের। এ হাঁস দেখতে অনেক সুন্দর, দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় ও বাজারে অনেক চাহিদা এবং দাম থাকায় হাঁস পালনের স্বপ্ন আরও বেড়ে যায়।
তারা সবাই নড়িয়া উন্নয়ন সমিতি নুসা’র ঋণি সদস্য। তারা জানতে পারেন নড়িয়া উন্নয়ন সমিতি নুসা’র সমন্বিত কৃষি ইউনিটের প্রাণিসম্পদ খাতের আওতায় বিভিন্ন প্রদর্শনী বাস্তবায়ন হচ্ছে। তাদের স্বপ্নের কথা জানালে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর অর্থায়নে ও কারিগরি সহযোগিতায় ৫০টি পেকিন হাঁসের বাচ্চা নিয়ে খামার শুরু করেন। তারা নুসা’র বিভিন্ন শাখা হতে হাঁস পালন বিষয়ক প্রশিক্ষণ নেন। পেকিন হাঁস ব্রয়লার টাইপ, দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় ৬০-৭০ দিনে প্রায় দুই থেকে তিন কেজি ওজন আসে, যার বর্তমান এক একটি হাঁসের বাজার মূল্য এক থেকে দেড় হাজার টাকা।
স্থানীয় একজন সংবাদকর্মী বলেন, পেকিন জাতের হাঁস দেখতে যেমন সুন্দর, তেমন অল্প সময়ে ওজন আসে, বড় হয়, অন্য হাঁসের তুলনায় বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। আমিও ৫০০ পেকিন জাতের হাঁস পালন করতে চাই।
ডগরী এলাকার পেকিন হাঁস পালনকারী খামারি বর্ষা আক্তার বলেন, আমি নড়িয়া উন্নয়ন সমিতি নুসা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে পেকিন হাঁস পালন শুরু করি। পেকিন হাঁস অল্প দিনে বড় হয় এবং তার গোস্ত খেতে অনেক সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় এর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। লালন পালন করে বিক্রি করেও লাভবান হওয়া যায়। তাই আমি আগামীতে খামারটি আরো বড় করে ৫০০ হাঁস উঠানোর ইচ্ছা আছে।
নড়িয়া উন্নয়ন সমিতি নুসা’র প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুজ্জামান বলেন, সমন্বিত কৃষি ইউনিট ভুক্ত প্রাণীসম্পদ খাতে ২০২২- ২০২৩ অর্থবছরে , পেকিন হাঁস পালনে প্রতিটি সদস্যের মাঝে ১ দিন বয়সের ৫০ টি করে পেকিন হাসের বাচ্চা, মাচা বাবদ-১৫০০ টাকা, ভ্যাকসিন বাবদ-১০০ টাকা, এক বস্তা ব্রয়লার স্স্ট্রেটার ফিড, রেজিস্টার ও সাইনবোর্ড উপকরণ সামগ্রী প্রতিটি খামারির মধ্যে বিতরণ করা হয়। আগামী অর্থবছরে পেকিন হাঁসের ১০০ টি খামারে বিতরণ সামগ্রী দেওয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের।