রবিবার ১১ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাত ৩:১১

শরীয়তপুরে জাল কাবিনে যৌতুকের মিথ্যা মামলা, কথিত স্ত্রীসহ কারাগারে ৪

মে ১৪, ২০২৩            

হৃদয়ের শরীয়তপুর ডেক্সঃ

জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কাবিননামা তৈরি করে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ এবং মোটা অঙ্কের মোহরানার দাবীতে মামলা করায় কথিত স্ত্রীসহ ৪ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। শরীয়তপুর আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সামসুল আলমের আদালতে রবিবার (১৪মে) এ আদেশ দেন।আদালতের আদেশের পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

জেল হাজতে পাঠানো ৪ জন হলেন- শরীয়তপুর ডামুড্যা উপজেলার দারুল আমান ইউনিয়নের গুয়াখোলা এলাকার ছামেদ আলী বেপারীর মেয়ে বিলকিস বেগম, ডামুড্যা উপজেলার শিধলকুড়া ইউনিয়নের বড় শিধলকুড়া এলাকার শাহজাহান  হাওলাদারের স্ত্রী ফরিদা বেগম, গোসাইরহাট উপজেলার দাসের জঙ্গল এলাকার আলমগীর হোসেন রাড়ীর ছেলে মোঃ আরিফ হোসেন, ডামুড্যা উপজেলার আল আমিন।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, দেলোয়ার সরদারের মামাতো ভাই  খালেদ ইসলাম বাবুল তার কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে ইতালির ভিসা দেওয়ার কথা কথা বলে তার মাধ্যমে কয়েকজনের কাছ থেকে ৩৪ লাখ টাকা নেয়। ভূয়া ভিসা দিয়ে সেই টাকা আত্মসাৎ করেন বাবুল। পরে ঢাকার সিএমএম আদালতে পেনাল কোডের ৪০৬,৪২০,৫০৬ ধারায় খালেদ ইসলাম বাবুলের বিরুদ্ধে মামলা করেন দেলোয়ার সরদার। সেই মামলায় বাবুলের এক বছরের কারাদণ্ড ও  ৫ হাজার টাকার অর্থদণ্ড দেয়া হয়। বাবুলকে সেই মামলা দেওয়ার কারনে ক্ষিপ্ত হয়ে দেলোয়ার সরদারের বিরুদ্ধে  একে একে অনেক গুলো মামলা দেয়া হয়। সব মামলা মিথ্যা প্রমাণ হওয়ায় ওই সব মামলা আদালত খারিজ করে দেয়। পরে তাকে পারিবারিকভাবে হেয়পন্ন ও হয়রানি করার জন্য একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্রবানিয়ে তার নামে ভুয়া আইডি কার্ড বানিয়ে কাবিন নামা দেখিয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ দেখানো হয়। পরে সেই কাবিননামা দিয়ে মোঃ দেলোয়ার হোসেন সরদার (৫২) নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী বিলকিস বেগম শরীয়তপুর চীফ জুডিশিয়াল  ম্যাজিষ্ট্রেটের আমলী আদালতে–একটি নালিশি মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেট ওই নারীসহ তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। তাঁদের জবানবন্দির উপর ভিত্তি করে আদালত মোঃ দেলোয়ার হোসেনে বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আদালতের পরোয়ানা পাওয়ার পর ডামুড্যা থানার পুলিশ মোঃ দেলোয়ার হোসেন সরদারকে গত ১৬ ফেব্রুয়ার ঢাকার ভাটারা থানার পুলিশের সাহায্যে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে। পরে ডামুড্যা থানার পুলিশ তাকে শরীয়তপুর আদালতে উঠলে  হাজির হওয়ার শর্তে অন্তবর্তিকালীন জামিন দেয়। পরে জামিন পেয়ে তিনি পরের দিন কাগজপত্র উঠিয়ে দেখে তার নামে ভুয়া আইডি কার্ড বানিয়ে খালেদ ইসলাম বাবুল  গত  তিন অক্টোবর ২০২২ ইং সালে ৭ লাখ টাকা দেনমোহরের কামিননামা তৈরি করেন।

এদিকে সেই ভুয়া কাবিননামা চ্যালেঞ্জ করে মোঃ দেলোয়ার সরদার গত ১৯ ফেব্রুয়ারী শরীয়তপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মূলচক্রান্তকারী খালেদ ইসলাম বাবুল বিলকিস সহ তার সহযোগীদের (কাবিননামার সাক্ষী) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আদালত ঘটনার সত্যতা পেলে পাঁচজন জামিন নিতে আসলে একজনকে এক হাজার টাকা মুচলেকা দিয়ে জামিন দিয়ে বাকী চাঁরজনকে কারাগারের পাঠানোর নির্দেশ দেয়। কাজী উচ্চ আদালত থেকে এ মামলার জামিন নিয়ে আসে।

এ রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ভুক্তিভোগী দেলোয়ার সরদার জানান, এ মামলায় আমি ও আমার পরিবার সামাজিকভাবে হেয়পন্ন হয়েছি। আমি এ চক্রের কঠিন শাস্তি দাবি করছি।

এ চক্রের সাথে জড়িত অভিযুক্ত টিম এম  আলমগীর বলেন, বিলকিস আমার সংস্থার কর্মী,  আমি এর বেশি কিছু জানি না। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা।

বাদী পক্ষের আইনজীবি মোঃ কামরুজ্জামান নজরুল জানান, এ মামলায় আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। আরও যারা এঘটনার সাথে জড়িত,  তাদের দ্রুত গ্রেফতারের  দাবি জানাচ্ছি।

© Alright Reserved 2021, Hridoye Shariatpur