হৃদয়ে শরীয়তপুর ডেস্কঃ
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা সদরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়াটার সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের মাঠে ক্লাশ বন্ধ রেখে উপজেলা, পৌর সভা ও ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ মাঠে দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনের কারণে বিদ্যালয় ও কলেজের পাঠদান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখা হয়। এতে বিদ্যালয় ও কলেজ মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী বঞ্চিত হয় ক্লাস থেকে।এ ঘটনায় ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ভেদরগঞ্জ হেডকোয়াটার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকদের সূত্রে জানা গেছে, সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, ভেদরগঞ্জ হেডকোয়াটার পাইলট উচ্চ বিদ্যলয় ও কলেজে সকাল ১০টা হতে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম চালানো হয়। তিনটি ভবনে পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলে।
স্কুল ও কলেজ শাখায় ১ হাজার শিক্ষার্থী পড়া-লেখা করে। তার সামনে বিদ্যালয়ের মাঠ।সেই মাঠে মঙ্গলবার সকাল ৯টা হতে নেতা-কর্মিরা মিছিল নিয়ে মাঠে জরো হতে থাকেন। প্যান্ডেলের সাথে সেখানে ১০টি মাইক স্থাপন করা হয়।আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সস্মেলন করার জন্য। পরে বেলা ১১ টার দিকে সম্মেলন উদ্বোধন করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মানব সম্পদ বিষযক সম্পাদক এম জুয়েল আহমেদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শরীয়তপুর ৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক। এ ছারা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতা,স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা,জেলা -উপজেলা পর্যায়ের নেতারা মঞ্চে বক্তব্য দেন। ওই মঞ্চে ভেদরগঞ্জ উপজেলা, পৌরসভা,নারায়নপুর ইউনিয়ন,রামভদ্রপুর ইউনিয়ন,ছয়গাঁও ও মহিসার ইউনিয়নের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন উপলক্ষ্যে ১ হাজার ২০০ নেতা-কর্মি মাঠে জরো হন। তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় মাঠে।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ও কলেজ মাঠে দেখা যায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন চলছে বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে। মাঠের পাশেই শহীদ মিনার, তার পাশেই চলছে রান্নাবান্নার আয়োজন। মাঠে বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সাথে স্কুল ড্রেস পরিহিত কিছু শিক্ষার্থীরা বসে আছেন চেয়ারে। অন্য শিক্ষার্থীরা বের হয়ে যাচ্ছেন বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে। পরে একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তারা জানায়, সকালে তারা ক্লাসে গেলে পাঠদান না করিয়ে শুধু হাজিরা নিয়ে ছুটি দেওয়া হয় তাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, এই বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠান ছাড়াও কয়দিন পরপরই এই বিদ্যালয়ের মাঠে রাজনৈতিক সামাজিক বিভিন্ন প্রোগ্রাম করা হয়। এতে পাঠদান বন্ধ থাকে এবং বিকট শব্দে আমাদের বাচ্চাদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটে।
নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আসিফ, জিহাদ, সায়মন জানান, সম্মেলনের কারনে হাজিরা ডেকেই ছুটি দিয়ে দিয়েছে স্যারেরা। অনেকে চলে গেছে, আমরা বসে গল্প করছি, বাসায় গিয়ে কি করবো। দুপুরে খিচুরি খেয়ে যাবো।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল মান্নান হাওলাদার জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে উপজেলা মাঠ চেয়েছিলাম, অফিস চলাকালীন দিন দেখে দেয়নি, স্কুলে আগে থেকেই প্রস্তুত করা একটি মঞ্চ ছিলো, তাই এখানে মনে হয় এটা করেছে।
এ ব্যাপারে ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মাইকের প্রচন্ড শব্দের কারনে ক্লাশ করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীদের ছুটি দেওয়া হয় নাই। তাই শিক্ষার্থীরা চলে যাচ্ছেন। অন্য আরো কিছু জানার থাকলে এমপি মহোদয়কে জিজ্ঞেস করুন। জানতে চাইলে বিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ওই মাঠে সম্মেলন করার জন্য আমরা কোন অনুমতি দেইনি। সকালে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের মাধ্যমে শুনেছি সম্মেলনের কথা।মাসিক সমাবেশ থাকার কারনে আর খোঁজ নেওয়া হয়নি।