উদ্বোধনের সাড়ে চার মাসেই শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ভবনে একাধিক ফাটল দেখা দিয়েছে। পরিষদের অডিটোরিয়ামেও ফাটল ধরেছে। কার্যক্রম শুরুর আগেই এমন ফাটলে আতঙ্কে আছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ সালে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সম্প্রসারিত চার তলা বিশিষ্ট ভবনের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভবনটিতে বসতে পারেননি প্রশাসনিক দফতরটির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) কর্মচারীরা। তবে এরই মধ্য নতুন এ ভবনটির দ্বিতীয় তলায় ইউএনওর কক্ষের পূর্বপাশের দেওয়ালের উপরিভাগে ১০-১২ ফুটের লম্বা তিনটি ফাটল দেখা দিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষটিতে ঢুকতে অনীহা প্রকাশ করছেন ইউএনও।
অন্যদিকে একই সঙ্গে উদ্বোধন করা হয় উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামের এক তলা ভবনটি। ভবনের দেওয়ালের পিলার ভীমের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে লম্বা লম্বা ফাটল। ঝুঁকিপূর্ণ অডিটোরিয়ামটিতে প্রতিমাসে মাসিক সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ চলছে।
৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবন দুটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর অধীনে মেসার্স শেখ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছে।
সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ, ঠিকাদারের দায়সারা কাজ ও নিন্মমানের রড, বালু, ইটসহ নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ দেওয়ান বলেন, ‘ঠিকাদারের দায়সারা কাজের জন্যই ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। এরকম মানের সামগ্রী দিয়ে যদি সরকারি ভবন তৈরি করা হয় তাহলে কীভাবে আমরা ভরসা পাবো। আমরা চাই বিষয়টি তদন্ত করে দেখা উচিত।
এ বিষয়ে শেখ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মানিক শেখ বলেন, ভবন দুটি আমার ফার্মের নামেই পেয়েছিল। তবে বাস্তবায়ন করেছে নুর আলম। দেওয়ালে ফাটলের বিষয়টি আপনার থেকেই শুনলাম। ভবন নির্মাণের ছয় মাস পর্যন্ত কোনো ক্ষতি হলে সমস্যাগুলো আমরা নিজেরাই সমাধান করে দেবো। তবে আমরা কোনো নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী অনুপম চক্রবর্তী বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষটি বন্ধ থাকে। তাই আমি এখনো জানিও নাই যে ওই কক্ষে দেওয়ালে কোনো ফাটল ধরেছে। আপনার থেকেই শুনলাম। আমি এখনই খোঁজ নিয়ে দেখছি। আর অডিটোরিয়ামের ফাটলের বিষয়টি আমি আর উপজেলা চেয়ারম্যান দেখেছি। আপাতত সেখানে সিমেন্ট দিয়ে জোড়া দেওয়া হয়েছে। আরও ছয় মাস আমরা অবজারভেশনে রাখবো ওই ভবনটি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ধারণা ভবনটির নিচে মাটি খুব দুর্বল। তাই হয়তো এক সাইডে দেওয়াল নেমে গেছে। যদি ছয় মাসের মধ্যে আরও কোনো ফাটল দেখা দেয় তাহলে আমরা নতুন করে ভবন নির্মাণ করবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২৯ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদের সম্প্রসারিত প্রশাসনিক ভবনের উদ্বোধন হয়েছিল। তবে এখনো পর্যন্ত ওই ভবনে কোনো দপ্তরের কর্মকর্তা উঠতে পারেননি। গেলো এক সপ্তাহ যাবত চারতলায় উপজেলা প্রকৌশলীর (এলজিইডি) অফিসের কার্যক্রম চলছে। কিন্তু আমি এখনো ওই ভবনে উঠতে পারিনি। পুরোনো ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ আছে। দ্রুতই ওই ভবনে আমার ওঠা জরুরি।
ইউএনও আরও বলেন, নতুন ভবনের আমার কক্ষের পূর্ব পাশের ওপরে দেওয়ালে ও পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। আমি এ বিষয়ে উপজেলা এলজিইডি অফিসে চিঠি পাঠিয়েছি। পাশাপাশি অডিটোরিয়ামেও ফাটল দেখা দিয়েছে। তাই দুটি ভবনেরই সমাধান করতে বলেছি। কক্ষটি ফাটল মেরামতসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে আমি ওই নতুন ভবনে উঠবো না।