হৃদয়ে শরীয়তপুর ডেস্কঃ
আমি তখন ক্যাডেট কলেজে। ক্লাস সেভেন শেষে বাসায় শীতের ছুটি কাটাচ্ছি। আড়াল থেকে শুনছি, মা খুব রাগ করছেন বাবার সঙ্গে – এতগুলো টাকা দিয়ে ক্রিকেট খেলা দেখার টিকিট কেনার কোনো মানে হয়। একটু সংকোচ করে বাবার উত্তর – হাতে পেনশনের কিছু টাকা পেলাম তাই ছেলেদের নিয়ে খেলা দেখার ইচ্ছা হলো।
টিকিটগুলো বাংলাদেশ বনাম এমসিসির (Marylebone Cricket Club) মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য তিন দিনের ক্রিকেট ম্যাচের। খেলা শুরু ৭ জানুয়ারি ১৯৭৭। স্থান ঢাকা (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু) স্টেডিয়াম। ক্যাপ্টেন টেড ক্লার্কের নেতৃত্বে এমসিসি ঢাকা এসে পৌঁছে ডিসেম্বরের ২৭ তারিখে। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে দুটি ম্যাচ খেলার পর তিন দিনের ঢাকা ম্যাচ বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি করে তখন। চল্লিশ হাজারের বেশি দর্শক খেলা দেখতে আসে ঢাকা স্টেডিয়ামে।
আজ খুব আফসোস হয়, বাবাকে যদি নিয়ে যেতে পারতাম সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে একটা টেস্ট ম্যাচ দেখার জন্য । তবে এইটুকু সান্তনা আমরা একসাথে একবার সিডনি‘র অদূরে
Sir Donald Bradman যাদুঘরে গিয়েছিলাম । বাবার সার্বক্ষণিক আক্ষেপ ছিল, রাজনৈতিক দায়িত্বের কারণে আমাদেরকে তাঁর সন্তানদেরকে ছোটবেলায় অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে , আমাদের জন্য তেমন কিছু করতে পারেন নি ,আমাদেরকে বেশি সময় দেন নাই এই নিয়ে মন খারাপ করতেন প্রায়ই ।
চোখ বন্ধ করলে আমি তো দেখি বাবা আমাদের সাথে সব সময় , সব জায়গায় । একসাথে স্টেডিয়ামে ক্রিকেট খেলা দেখা কিংবা গ্যালারিতে বসে আবাহনীর ফুটবল খেলা দেখা, ছোট বেলায় ছুটির দিন সবাই মিলে ক্যারম খেলা , সুযোগ পেলে রাজেন্দ্রপুর অথবা কক্সবাজারে আমাদের নিয়ে অবকাশ কাটানো – কোথায় ছিল না বাবা আমাদের সাথে ।
ক্যাডেট কলেজে ভর্তির মেডিকেল পরীক্ষার জন্য কত কষ্ট করে বাসে চড়ে আমাকে নিয়ে যান মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ – এ কথাটা প্রায়ই মনে পড়ে আমার ।যখন বিদেশ যেতেন সেই সেই দেশের ভিউ কার্ড দিয়ে বাবার চিঠি পেয়ে কি যে ভাল লাগতো আমার ।
যখন কলেজ থেকে ছুটিতে আসতাম ঢাকা নিউ মার্কেটে আক্স ষ্টুডিওতে পারিবারিক ছবি , বেইলি রোডে মঞ্চ নাটক , স্টেডিয়ামে খেলা দেখা আর ছুটির শেষ দিনে পরিবারের সবাই মিলে বাইরে খেতে যাওয়া – এই ছিল আমাদের গত্ বাধা নিয়ম। কি দারুন একটা সময় ছিল তখন।