পদ্মা সেতু বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাসী করেছে বলে মন্তব্য করেছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত জনসভা সফল করার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে দক্ষিণবঙ্গের ২২টি জেলার প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রস্তুতি সভায় সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। সঞ্চালনা করেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, ‘বাঙালির ইতিহাসে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় হচ্ছে সবচেয়ে বড় অর্জন, আমাদের গর্বের প্রতীক। এর মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি গণতন্ত্র, সংবিধান, জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা, আমাদের ভূখন্ড এবং বাঙালি হিসাবে আমাদের পরিচয়। কিন্তু স্বাধীনতাত্তোর আমাদের যা যা অর্জন, যে সকল বিষয়ে বাঙালি হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি যেমন পোশাক শিল্প, ক্রিকেট ইত্যাদির মধ্যে আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন হচ্ছে পদ্মা সেতু। ’
যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়েছে। এ আত্মবিশ্বাস অর্জন সম্ভব হয়েছে শুধু রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বের কারণে। তার নেতৃত্বের গুণে বাংলাদেশ আজ একটি শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে আছে যা সরকারকে সাহস যুগিয়েছিল নিজস্ব অর্থায়ণে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিতে।’
যুবলীগ চেয়ারম্যান পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে এই সেতু একটা মাইলফলক হিসাবে ভূমিকা রাখবে। গ্রামের মানুষকে জীবিকা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার জন্য শহরে দৌঁড়াতে হবে না। নিজ জেলা থেকেই শহরের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবে। উন্নতমানের বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, শিল্প, কল-কারখানা ও কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে। খুব শীঘ্রই, স্বাভাবিকভাবে আপনার জেলার পৌরসভা মেগা শহরে রূপান্তরিত হবে।
পরশ বলেন, এই সেতু নির্মাণের ফলে দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নদীবেষ্টিত ভূখন্ড সরাসরি রাজধানীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। পদ্মা সেতু যেমন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক সুবাতাস বয়ে আনবে, তেমনই কমপক্ষে এক দশমিক পাঁচ শতাংশ জাতীয় আয় বৃদ্ধিও নিশ্চিত করবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে, লাভবান হবে পুরো দেশের মানুষ। প্রসার হবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনের।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা আজম বলেন, ‘আগামী ২৫ জুন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত জনসভা সফল করার জন্য যুবলীগকেই প্রধান দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচি সফল করার জন্য আমাদের ধারণার চেয়েও যুবলীগ বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করি যুবলীগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে উদ্দেশ্য করে যারা দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র করেছে তারা কিন্তু বাংলাদেশেরই মানুষ। তাদের ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই।
প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে সতর্ক থাকতে বলেছেন উল্লেখ করে মির্জা আজম বলেন, আমরা যদি সজাগ থাকি তাহলে কেউ কোনো ধরনের নাশকতা করতে পারবে না। এই পদ্মা সেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতার প্রতীক। কারণ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ণে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল কিন্তু মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর বিনিয়োগ থেকে সরে দাড়ায়। বঙ্গবন্ধুকন্যা ভেঙ্গে না পড়ে সাহসিকতার সঙ্গে স্বপ্নের পদ্মা নির্মাণের ঘোষণা দেন এবং আজ সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। এই পদ্মা সেতু শুধু সক্ষমতার প্রতীক নয়, এটা ষড়যন্ত্রকারীদের মুখে বিশাল চপেটাঘাত ‘
যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ‘২৫ জুন বাঙালি জাতির অস্তিত্বের দিন। পদ্মা সেতুকে ঘিরে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে আবার চোরের দেশ, ভিক্ষুকের দেশ, দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোবল আর আত্মবিশ্বাসের ফলে নিজেদের অর্থায়ণে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে তার দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সারা বিশ্ব আজ বাংলাদেশকে মর্যাদার চোখে দেখছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. খালেদ শওকত আলী, মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন এমপি, মোঃ রফিকুল ইসলাম, মোঃ নবী নেওয়াজ, সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার, ইঞ্জি. মৃনাল কান্তি জোদ্দার, তাজউদ্দিন আহম্মেদ, জসিম উদ্দিন মাতুব্বর, মোঃ আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা, সুব্রত পাল, মুহা. বদিউল আলম, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মো. মাজহারুল ইসলাম, ডা. হেলাল উদ্দিন, মো. সাইফুর রহমান সোহাগ, মো. জহির উদ্দিন খসরু, আবু মুনির মো. শহিদুল হক চৌধুরী রাসেল, মশিউর রহমান চপল, অ্যাড. ড. শামীম আল সাইফুল সোহাগ, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজা, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দীসহ প্রমুখ।