হৃদয়ে শরীয়তপুর ডেস্কঃ
বন্ধুদের সঙ্গে হাসিমুখে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাড়ি থেকে সকালে বিদ্যালয়ে আসে লামিয়া আক্তার (৯)। কিন্তু বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান শেষে সে আর বাড়ি ফিরে আসতে পারেনি। দুপুরে খাটিয়ায় করে স্বজনেরা তার নিথর দেহ নিয়ে বাড়ি ফেরেন। বিজয় দিবসের শোভাযাত্রায় অটোরিকশা ঢুকে লামিয়াকে চাপা দেয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলা চরভয়রা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। লামিয়া ১০ নম্বর চরভয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। সে ওই এলাকার স্বপন মাঝি ও সান্ত্বনা বেগম দম্পতির মেয়ে।
ডামুড্যা থানা-পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে একটি বিজয় শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি অটোরিকশা শোভাযাত্রায় ঢুকে যায়। এ সময় অটোরিকশার নিচে পড়ে যায় লামিয়া। পরে বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে স্বজনেরা দুপুরে লামিয়ার মরদেহ বাড়ি নিয়ে যান। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
লামিয়ার স্বজনেরা জানান, লামিয়া মেধাবী ছাত্রী, তৃতীয় শ্রেণিতে তার রোল নম্বর ১। তার বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। গত বুধবার বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পরীক্ষা দেয় লামিয়া।
লামিয়ার মা সান্ত্বনা বেগম আহাজারি করে বলেন, ভোরবেলা মেয়ে না খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। বিজয় শোভাযাত্রা থেকে মেয়ে আমার লাশ হয়ে ফিরবে ভাবতেও পারিনি।
চরভয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আল আমিন মিয়া বলেন, বিজয় শোভাযাত্রার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করছিল। তারা বিদ্যালয়ের মাঠে আসতে গিয়ে হুড়াহুড়ি করতে থাকে। এমন সময় পেছন থেকে একটি অটোরিকশা লামিয়াকে চাপা দেয়। এমন একটি আনন্দের দিন বিষাদে পরিণত হবে কল্পনাও করতে পারিনি।
ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিবা খান বলেন, অটোরিকশার চাপায় স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনাটি দুঃখজনক। ওই ছাত্রীর পরিবারের এ ক্ষতি পূরণ কোনো কিছুর বিনিময়ে হয় না। তারপরও আমারা পরিবারটির পাশে আছি।
ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ শরীফুল ইসলাম বলেন, যে অটোরিকশাচালক এ দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন, তিনি পালিয়েছেন। তাঁকে খোঁজা হচ্ছে। তবে এ ঘটনায় থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।