হৃদয়ে শরীয়তপুর ডেস্কঃ
শরীয়তপুর গোসাইরহাট উপজেলার দাসের জঙ্গল বাজারের নতুন টলঘর করার জন্য পুরোনো টল ঘর ভেঙে নতুন টলঘর ২ বছরেও না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পরছে ওই বাজারের প্রায় পাঁচশো দোকানিরা।
বাজারের দোকানিরা জানায়, গোসাইরহাট উপজেলার দাসের জঙ্গল বাজারটি অনেক পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বাজার। বাজারের ভিতরে সরকারের নামে বি,আর,এস ১১৬০ও ১১৬২ নং দাগের ১০.৫ শতাংশ জমি রয়েছে তার উপরে নির্মিত ছিলো ৩ টি টলঘর। এই টলঘরে একটিতে ছিলো মাছ বাজার, অপরটিতে ছিলো কাচা বাজার এবং অন্যটিতে ছিলো পান সুপারির বাজার। ২০২০ সালের শেষের দিকে গোসাইরহাট পৌরসভা থেকে নতুন টলঘর নির্মান করা হবে তাই ভেঙে ফেলা হয়। কিছু দোকানিদের বাজারের পাশেই নদীর পারে স্থানান্তর করলে বাকিরা বেকার হয় পরে। ২ বছর যাবৎ বেকার থাকায় ব্যবসার মুলধন শেষ করে আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধার- দেনা করে চলতে চলতে এখন অনেক টাকা ঋণগ্রস্থ হয়ে পরেছে তারা। এবং অনেক দোকানের আগের তুলনায় বেচাকেনা কমে যায় কারন মাছ বাজার নদীর পাড়ে স্থানান্তর করার কারনে মাছ কিনে বাজারের ভিতরে আর আসে না বাইরের দোকান থেকেই কেনাকাটা করে চলে যায়। মাছ বাজার ও কাচা বাজারের উপরে নির্ভর করেই চলতো তাদের বেচা- কেনা।যারা নিয়মিত টলঘরে বসে বেচা-কিনা করতো এখন টলঘর না থাকায় তারা আবার অনেকে নিয়মিত বাজার বসাইছে রাস্তার উপরে। রাস্তার উপরে বাজার বসার কারনে যানবাহন চলাচল সহ সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে এবং যে কোন সময়ে ঘটতে পারে মারাত্মক দূর্ঘটনা। অনেক সময় অতিবাহিত হলেও যখন নতুন টলঘর নির্মান হয়না তখন ওই বাজারে ৪৭৫ জন দোকানির স্বাক্ষরিত নতুন টলঘর দ্রুত নির্মানের দাবী জানিয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারীতে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর দরখাস্ত করেন দোকানিরা। টলঘর ভাঙার ২ বছর পার হলেও এখনো কোন সুফল পাচ্ছে না তারা।
চা দোকানি কাজল মৃধা বলেন, আমি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী আমার টলঘরে চায়ের দোকান ছিলো। টলঘর ভাঙার পরে আমি রাস্তার পাশে বসে চা বিক্রি করি। রাস্তায় বসে দোকানদারি করার কারনে মাঝে মধ্যে দোকানের ভিতরে গাড়ি এসে মালামাল ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। গাড়ি চালকদের কিছু বলতেও পাড়ি না কারন আমি রাস্তার যায়গা দখল করে বসেছি। এবং এখানে আগের মতো বেচা- কিনা ও হয় না আগে দোকানে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা বিক্রি হতো এখন ১ হাজার থেকে ১৫শো টাকা বিক্রি হয়। ২ বছর যাবৎ এমন করুন অবস্থায় দিন পার করতাছি তবুও টল ঘর টি নির্মান করা হয়নি। টলঘর ভাঙার আগে পৌরসভার সচিব বলেছিলো ভাংগার সাথে- সাথেই নতুন টলঘর নির্মানের কাজ শুরু করবে কিন্তু ভাংগার পর বিভিন্ন আকারের টাকা দাবী করেন টাকা দিতে দোকানিরা রাজি না হলে এইভাবে নতুন টলঘরের কাজ ঝুলিয়ে রাখে।
মুদি দোকানি বায়েজিদ মিয়া বলেন,২০২০ সালের শেষের দিকে পৌরসভার সচিব আমাদের বলেন টলঘর পুরনো হয়ে গেছে নতুন টলঘর নির্মান করবো তাই আপনারা কিছুদিন অন্যস্থানে দোকানদারি করেন কিছুদিন পর নতুন টলঘর নির্মান করলে আবার চলে আসবেন। কিন্তু টলঘর ভাঙার ৩ মাস পার হলেও নতুন টলঘর নির্মানের কোন উদ্বেগ দেখি না তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাছে লিখিত আবেদন জানাই কোন কাজ হয় নাই।পরে জেলা প্রশাসকের কাছে সরাসরি সাক্ষাৎ করে তার কাছে আবেদন দিলে সেও আশ্বাস দেন কিন্তু এখনো কোন সুফল পাইনি।
কাচামাল ব্যবসায়ী কাঞ্চন ফরাজী বলেন, এই বাজারে আমি আলু পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি করি খুচরা ব্যাবসায়ীদের কাছে। টলঘর ভাঙার পরে খুচরা ব্যাবসায়ীরা বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে কেউ ব্যবসা বন্ধ করে দিছে তাই তাদের কাছে আমার পাওনা প্রায় ১৫ লাখ টাকা দিতে পারছেনা। এবং আগে প্রতিদিন আমি ২ লাখ টাকা কেনা- বেচা করতাম সেখানে এখন ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করতে কষ্ট হচ্ছে তাই অতিদ্রুত টলঘর নির্মান করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাই।
এবিষয়ে গোসাইরহাট পৌরসভার সচিব আবদুল আলিম মোল্লা বলেন, আগের টলঘরটি পুরোনো হয়ে গিয়েছিলো তাই একটি আধুনিক টলঘর নির্মান করার জন্য পুরানো টলঘর ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু যেহেতু এই যায়গার মালিক সরকার তাই ৩ তলা ভবন করতে হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি লাগবে। আমরা এখনো অনুমতি পাই নাই তাই একটু দেরি হছে তবে খুব শিগগিরই অনুমতি পাবো। দোকানিরা যেই অভিযোগ করছে তা সব মিথ্যা অভিযোগ।
উক্ত বিষয়ে গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাফী বিন কবির বলেন, পৌরসভা মার্কেট ভবনের জন্য ফাইল ডিসি সাহেবের কাছে আছে। ডিসি স্যার মিনিস্ট্রিতে পাঠাবে। অনুমোদন আসলে কাজ শুরু করা হবে।