শাওন বেপারী, স্টাফ রিপোর্টারঃ
শরীয়তপুরের জাজিরার পশ্চিম নাওডোবা ইউনিয়নের সরকারি পূণর্বাসন সাইটের একটি ছোট্ট ঘরে বসবাস করে মৃত জলিল মুন্সির দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছেলে সিরাজ মুন্সি(৩৮) ও তার পরিবার। সিরাজ মুন্সি অন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোন কাজই করতে পারেন না তিনি। যার ফলে সংসারের হাল ধরেছে সিরাজ মুন্সির ছোট্ট ছেলে ১২বছরের শিশু আব্দুর রহমান।
আব্দুর রহমান(১২), সাদিয়া(১৭), সুমাইয়া(৬) ও মা নাজমা বেগম(৩৫) সহ সিরাজ মুন্সীর পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৫ জন। চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য সহায় সম্বল বিক্রি করে নিস্ব প্রায় পরিবারটি একেবারেই অসহায় হয়ে পড়েছে। যার ফলে অত্যন্ত কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে সিরাজ মুন্সির এই পরিবারটিকে।
নাওডোবা বাজারে এক সময় ছোট্ট পুড়ি-সিঙ্গারার দোকান করা সিরাজ মুন্সির হাজী আঃ মান্নান ফকিরের কান্দি গ্রামের পৈত্রিক সম্পত্তি পদ্মাসেতুর এপ্রোচ সড়কের অধিগ্রহণ করে সরকার। সেসময় পূণর্বাসন প্রজেক্টে ২.৫ শতাংশ জমি বরাদ্দ পায় তারা। সিরাজ মুন্সীর চিকিৎসার কাজে সেই সম্পত্তিটুকু বিক্রি করে দিতে হয় তাকে। ফলে নিজের বাড়িতে এখন নিজেই থাকেন ভাড়ায়।
সিরাজ মুন্সী জানায়, ঢাকায় কাজ করতে গিয়ে ভাড়ি বোঝা মাথায় নিয়ে পড়ে গিয়ে অন্ধ হওয়ায় কোন কাজ করতে পারেনা। এমনকি ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করাও সম্ভব হয়নি। বর্তমানে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তার ছোট্ট ছেলে আব্দুর রহমানকে। এই বয়সেই নিজের সকল শখ-ইচ্ছা ও পড়াশুনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে ভ্যান চালিয়ে নিজের সংসার চালাচ্ছে আব্দুর রহমান।
আব্দুর রহমান জানায়, তার বাবা অসুস্থ থাকায় সে তার মায়ের সহযোগিতায় একসময় ঝালমুড়ি বিক্রি করতো। তাতে না পোষায় এখন কিস্তিতে একটি ভ্যান কিনে তা চালিয়েই নিজের পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা ও বাবার চিকিৎসা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে সে। তবে যা আয় হয়, তাতে তার বাবার চিকিৎসা করাতো দূরে থাক সংসার চালাতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে।
আব্দুর রহমানের মা নাজমা বেগম জানান, আমার স্বামী অন্ধ হয়ে যাওয়ায় ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে আমাদের। আমার ছোট্ট ছেলেটা অল্প কিছু আয় করতে পারে তা দিয়েই কষ্ট করে চলছি। আমার স্বামীর চিকিৎসার ব্যবস্থাটা হলে হয়তো আমাদের সংসারটা চলতো আর আমার ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনাও করাতে পারতাম।
স্থানীয় ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জুলফিকার আলি জানান, সিরাজ মুন্সির পরিবারের বিষয়টি এর আগে শুনলেও ভালোভাবে আমার বিষয়টি জানা ছিলোনা। আমি বিষয়টি স্থানীয় মেম্বারের সাথে কথা বলে তাদের জন্য অবশ্যই কিছু করার চেষ্টা করবো। প্রয়োজনে সিরাজ মুন্সির চিকিৎসা ও তার ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এ,বি,এম সৌরভ রেজা শিহাব জানান, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সিরাজ মুন্সির জন্য ঔষধ ও তার মেয়েকে বৃত্তি প্রদান এবং আঃ রহমানকে আপাতত একটি ভ্যান কিনে দেয়াসহ প্রায় ৫-৬টি সহযোগিতা করতে পারবো তার পরিবারকে। বিশেষ করে সিরাজ মুন্সির চিকিৎসা ও আঃ রহমান চাইলে তার পড়াশোনার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ কামরুল হাসান সোহেল জানান, আমরা সিরাজ মুন্সির পরিবারের বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের উপিজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সাথে কথা বলে সিরাজ মুন্সির পরিবারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।